সোনারগাঁ প্রতিনিধি:টানা বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার প্রধান সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সড়কটির মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে বৈদ্যেরবাজার ঘাট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার অংশের বিটুমিন ও খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় তিন বছর ধরে সড়কটির বেহাল অবস্থা থাকার পর গত বছর সড়কটিতে সংস্কার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এ সংস্কারও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বৃষ্টি হতেই সড়কের বিটুমিন ও খোয়া উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এ বছরও সওজ সড়কটিতে কয়েকবার জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে। কিন্তু অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি জমে বিটুমিন ও ইট-পাথর উঠে গেছে। সড়কটির এমন বেহাল অবস্থায় এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা টেকসই সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
সড়কটির পাশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, সোনারগাঁ থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার একাংশের প্রায় এক লাখ মানুষের প্রতিনিয়ত চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অসংখ্য স্থানে কার্পেটিং উঠে ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পর এসব খানাখন্দে পানি জমে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। যানবাহনের ধীরগতির কারণে দেখা দিয়েছে যানজট।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে যায়। এতে দুর্ঘটনায় পড়ে সাধারণ যাত্রীরা অনেকেই আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের। এ ছাড়া প্রসূতি নারীদেরও হাসপাতালে নিতে দেখা দিয়েছে চরম ঝুঁকি।
সিএনজিচালক ইয়াসিন মিয়া বলেন, ‘ভাঙাচোরা রাস্তায় সিএনজি চালাতে গিয়ে প্রায় নাটবল্টু খুলে পড়ে যায়। দিনে যা আয় করি মেরামতেই তা খরচ হয়ে যায়। আর যানজট তো প্রতিদিন লেগেই থাকে। ২০-২৫ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪০ মিনিট।’
অটোরিকশাচালক রফিক মিয়া বলেন, ‘সড়কে খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। কয়েক দিন আগে যাত্রী নিয়ে গর্তের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছি।’
সোনারগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাত্রী আক্তার বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে কলেজে আসা-যাওয়া করি। এমনিতে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে, তার ওপর অনেক অংশে ভাঙা থাকায় কলেজে যেতে দেরি হয়। সঠিক সময় ক্লাস ও পরীক্ষায় উপস্থিত হওয়া যায় না।’
মো:কাউছার নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। ভাঙা রাস্তা ও যানজটে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে হাসপাতালে যেতে আধা ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। ওই সময়ের প্রতিটা মুহূর্তই মূল্যবান ছিল। আমরা খুব অস্থির ছিলাম। সড়কটির সংস্কার হলে দ্রুত সময়ে হাসপাতালে পৌঁছানো যাবে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। ছোট-বড় গর্ত থাকায় দুর্ঘটনাও ঘটে প্রায় সময়। সড়কটির সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি।’
জানতে চাইলে সওজ নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে। বৃষ্টি কমলে দ্রুত সংস্কার করা হবে। এরই মধ্যে সড়কের দুটি স্থানে আরসিসি ঢালাই দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। বৃষ্টিতে ওই অংশে এখন খানাখন্দ হয় না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ড্রেনেজ লাইনের কাজও শুরু হবে।’
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মোঃ কাউসার মিয়া
বার্তা সম্পাদকঃ মীমরাজ হোসেন
প্রকাশকঃ মোঃ কামরুল ইসলাম
Copyright © 2024 আজকের নারায়নগঞ্জ. All rights reserved.